সরিষার তেলের উপকারিতা - ত্বকে সরিষার তেল মাখলে কি হয়

আপনি কি সরিষার তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? যদি আপনার চাওয়া এমনটি হয়ে থাকে তাহলে এই পোস্ট টি সময় নিয়ে পড়ুন।আশা করছি আপনি আপনার তথ্য পাবেন।

আমি এই পস্টে সরিষার তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং আমাদের ত্বকে সরিষার তেল মাখলে কি হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করছি। 

ভূমিকাঃ

সয়াবিন তেল বাজারে আসার পর আমরা অনেকেই সরিষার তেলের উপকারিতা ভুলে গিয়েছিলাম। তবে আগে আমাদের রান্নার প্রধান উপাদান ছিল সরিষার তেল। সরিষা বা সরিষার তেল সর্বদা প্রতিটি বাড়ির রান্নাঘরে থাকে - রান্না বান্না এমনকি ম্যাসেজেও ব্যবহৃত হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে এই তেলের ব্যবহার বহু পুরনো। 

৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ভারতে সরিষার তেল ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সরিষার দানা পিষে সরিষার তেল তৈরি করা হয়। সরিষার তেলের রং গাঢ় লালচে হলুদ এবং এর গন্ধ তীব্র ঝাঁঝাল হয়।

ঘানি ভাঙা সরিষার তেলে রয়েছে স্বাস্থ্য উপকারিতা। বহু বছর ধরে সরিষার তেল খারাপ তেলের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল, কিন্তু এখন এটি অনেকেই ব্যবহার করেন। এমনকি নিউইয়র্কের কিছু জনপ্রিয় রেস্তোরাঁর শেফরাও এই তেল ব্যবহার করেন।

সরিষার তেলে যা  যা আছেঃ

সরিষার তেল মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি সমৃদ্ধ। সরিষার তেল মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট, ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ। এতে খুব কম স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে।
১০০ গ্রাম সরিষার তেলে যা আছেঃ
  • 12 গ্রাম স্যাচুরেটেড ফ্যাট
  • 21 গ্রাম পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট
  • 59 গ্রাম মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট

সরিষার তেল যে ভাবে তৈরি হয়ঃ

সরিষার তেল ২ উপায়ে তৈরি হয়

১। কাচ্চি ঘানি (Cold pressed) ঃ এই প্রক্রিয়ায়, সরিষাকে সরাসরি গুঁড়ো করে তেল বের করা হয়, যা খুব ঘন এবং ঝাঁঝাল। এই তেল রয়েছে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য উপকারিতা সঙ্গে  এটি হজমের উন্নতি করে, হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে, চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে এবং পেশী শক্ত হওয়া রোধ করে।

২। এসেনশিয়াল অয়েল (Mustard Essential oil) ঃ এই পদ্ধতিতে, সরিষাকে জল, ভিনেগার বা অন্য কোনও তরলের সাথে মেশানো হয়। এই তেল খুব পাতলা হয়। সরিষার বীজে মাইরোসিনেজ এবং সিনিগ্রিন নামে দুটি যৌগ থাকে। পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এই দুটি উপাদান বিষাক্ত যৌগ তৈরি করে। তাই এই ধরনের তেল খাওয়া আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। 

সরিষার তেলের উপকারিতা ঃ

হজম প্রক্রিয়াঃ সরিষার তেল হজমে সাহায্য করে এবং মেটাবলিক রেট বাড়ায়।

ব্যাথার উপসমঃ সরিষার তেলের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও হাঁটু ব্যথা, অন্যান্য জয়েন্টের ব্যথা, বাত এবং বাত ব্যথা উপশম করে।

ক্যান্সারে চিকিৎসাঃ এই তেলের গ্লুকোসিনোলেট কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

ফুসফুস ভালো রাখেঃ সরিষার তেল এক ধরনের ডিকনজেস্ট্যান্ট বা শ্বাসযন্ত্রের ক্লিনজার। এই তেলের সঙ্গে রসুন মিশিয়ে বুক ও পিঠে লাগালে কফের সমস্যা দূর হয়।

হৃদিপিন্ড সুস্থ রাখতে সরিষার তেলঃ সরিষার তেলে থাকা মনোস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ভালো কোলেস্টেরল বাড়িয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি 70% কমাতে পারে।

এজমা রোগে সরিষার তেলের উপকারিতাঃ অ্যাজমা রোগে আক্রন্ত হলে সরিষার তেল বুকে মালিশ করলে শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্ষমতা বাড়ে। এর নিয়মিত ব্যবহার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে।

ত্বক ও চুলের যত্নে সরিষার তেলের কার্যকারিতাঃ শীতকালে এই তেল ত্বকে লাগালে ত্বকের শুষ্কতা দূর হয় এবং শরীর গরম থাকে। এই তেলের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য ত্বক ও চুলকে চকচকে করে। এই তেল ব্যবহার করলে ত্বক কখনো কালো হয় না বরং ত্বকের টোনের উন্নতি ঘটে।

ঘুমের ক্ষেত্রে তেলঃ সন্ধ্যায় ঘুমানোর আগে নাভিতে কয়েক ফোঁটা সরিষার তেল লাগালে উপকার পাওয়া যায়।

স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে তেলঃ সরিষার তেল স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে অনেক সহায়তা করে
মেয়েদের মাসিকের ব্যথাঃ মেয়েদের মাসিকের ব্যথা সহ অন্য পেটের ব্যথায় সরিষার তেল পেটে মালিশ করলে সুফল পাওয়া যায়।

ওজন কমাতে সরিষার তেলের উপকারিতাঃ রিবোফ্লাভিন এবং নিয়াসিন সমৃদ্ধ সরিষার তেল শরীরের মেটাবলিজম বাড়িয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে।

দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষায় সরিষার তেলঃ সরিষার তেল  দাঁতের জন্য স্বাস্থ্যকর এবং জিনজিভাইটিস এবং পিরিয়ডোনটাইটিস প্রতিরোধের জন্য দরকারী। 1/2 চা চামচ সরিষার তেল + 1 চা চামচ হলুদ গুঁড়া + 1/2 চা চামচ লবণ মিশিয়ে দিনে দুবার হালকাভাবে দাঁত ও মাড়িতে ঘষুন উপকার পাবেন।

সরিষার তেলের অপকারিতাঃ

বর্তমানে, রান্নায় কোন তেল ব্যবহার করতে হবে তা নিয়ে বিতর্ক শেষ হয়নি। কেউ বলেন পরিশোধিত তেল, আবার কেউ বলেন সরিষার তেল। কিন্তু এই দুই ধরনের তেলের স্বাদ আলাদা। সরিষার তেলের সাথে পরিশোধিত তেলের মতো কিছু খাবার ভালো যায়। সরিষার তেলে লুচি ভাজা হলে যেমন খারাপ লাগে, তেমনি সাদা তেলে মাছ ভাজা হলে মাছের স্বাদ থাকে না। 

রান্নায় ব্যবহার করার জন্য সর্বোত্তম তেল স্মোক পয়েন্ট দ্বারা নির্ধারিত হয়। সরিষার তেল থেকে শুরু করে অলিভ অয়েল থেকে রাইস ব্রান অয়েল, বাজারে বিভিন্ন ধরনের তেল রয়েছে। এই তেল যেমন হার্টকে সুস্থ রাখতে উপকারী, তেমনি হাড় ও ত্বকের গঠনেও এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই রান্নার ধরনের উপর নির্ভর করে তেলের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

পরিশোধিত এবং অপরিশোধিত উভয় তেলই রান্নায় ব্যবহৃত হয়। অপরিশোধিত তেলে অনেক বায়োঅ্যাকটিভ উপাদান রয়েছে যেমন ,ভিটামিন ই যা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। এই কারণেই অলিভ অয়েল বা রাইস ব্রান অয়েল দিয়ে স্বাস্থ্যকর রান্না করা হয়। অন্যদিকে সরিষার তেল পরিশোধিত না করে ব্যবহার করা যায় না। 

তাই সব ভাজা এবং মশলাদার রান্নায় সরিষার তেল ব্যবহার করা হয়। সরিষার তেলের অনেক উপকারিতা থাকলেও এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। ইউরিক অ্যাসিড বাড়ানো থেকে শুরু করে ফুসফুসের সমস্যা, সরিষার তেল অনেক কিছুর কারণ হতে পারে।

ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা বেড়ে যায়ঃ বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে সরিষার তেলে ৪২ থেকে ৪৭ শতাংশ ইউরিক অ্যাসিড থাকে। এতে ওমেগা 9 ফ্যাটি অ্যাসিডও রয়েছে। আর এই ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের জন্য বিষাক্ত। এ কারণে বেশি পরিমাণে সরিষার তেল খেলে ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা বেড়ে যায়।

হার্টের জন্য সরিষার তেল ক্ষতিকরঃ সরিষা ইরেটিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ। যা হার্টের জন্য ভালো নয়। মায়োকার্ডিয়াল লিপিডোসিস অতিরিক্ত সরিষার তেল বা মসলাযুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে হতে পারে। যা শরীরে বেশি ট্রাইগ্লিসারাইড তৈরি করে হার্টের ক্ষতি করে। তাই হার্ট ফেইলিউরের সম্ভাবনা থাকে।

সরিষার তেলে ফুসফুস ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়েঃ ইরেটিক অ্যাসিড ফুসফুসের জন্যও খুব ক্ষতিকর। প্রচুর পরিমাণে সরিষার তেল খাওয়ায় প্রথমে ফুসফুসের উপরের অংশকে প্রভাবিত করে। এই ক্ষতি এড়ানো না গেলে ফুসফুস ক্রমান্বয়ে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেখান থেকে ক্যান্সার হতে পারে।

ত্বকের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর হতে পারেঃ সরিষার তেলের ত্বকে বেশ কিছু ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। সরিষার তেল এপিডার্মিসের ক্ষতি করে ত্বকের পানির পরিমাণ কমায়। এর সাথে, এপিডার্মাল কেরাটিনোসাইটের গঠনগত পরিবর্তনও ঘটে। ফলে ত্বকে ফোস্কা পড়ে। এ কারণেই সরিষার তেল দিয়ে শিশুদের মালিশ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

গর্ভাবস্থায় সরিষার তেল খাওয়াঃ গর্ভবতী মহিলাদেরও মশলাদার খাবার খাওয়া নিষিদ্ধ। আর সরিষার তেলও। কারণ এতে বেশ কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক যৌগ রয়েছে। যা ভ্রূণ গঠনে বাধা দেয়। রাসায়নিক যৌগের কারণেও গর্ভপাত হতে পারে।

লেখকের মন্তব্যঃ

প্রিয় পাঠক ,আপনাদের সঠিক তথ্য দেওয়ার জন্য আমার এই সল্প প্রচেষ্টা। আশা করছি আপনি আপনার খোঁজা তথ্যটি এখানে পেয়েছেন। আপনি আমার দেওয়া তথ্যে হ্যাপি হলে একটি কমেন্ট করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url