আধুনিক পদ্ধতিতে খামারে ছাগল লালন পালন

 আধুনিক পদ্ধতিতে খামারে  ছাগল লালন পালন সম্পর্কে আপনি কি জানতে চাচ্ছেন? কিন্তু শেষ পর্যন্ত সঠিকভাবে তথ্য পাচ্ছেন না। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আমি আশা করছি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনার কাঙ্খিত চাওয়া ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হব। আপনি যদি সঠিক তথ্য পেতে চান তাহলে নিচের আর্টিকেলটি পড়ুন।



আমি এই আর্টিকেলের মধ্যে আধুনিক পদ্ধতিতে খামারে  ছাগল লালন পালন, পরিকল্পনা, ছাগলের জাত, ছাগল সংগ্রহের নিয়ম ইত্যাদি এরকম সকল তথ্য লিপিবদ্ধ করেছি।আপনি যদি ছাগলের খামার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে নিচের আর্টিকেলটি সময় নিয়ে পড়ুন।

ভূমিকাঃ

 আধুনিক পদ্ধতিতে খামারে  ছাগল লালন পালন পরিকল্পনা, মানুষ কর্তৃক গৃহীত উদ্যোগের মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ এবং লাভজনক উদ্যোগ। ছাগলের খামার পরিকল্পনা মানুষের বেকারত্ব কিংবা আর্থিক সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে। আধুনিক পদ্ধতিতে খামারে  ছাগল লালন পালন পরিকল্পনা একটি পরিবারের সচ্ছলতা আনতে সক্ষম। সঠিকভাবে ছাগল লালন পালন পদ্ধতি মানুষের মাংসের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ছাগলের খামার পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রাণী উৎপাদনে ভূমিকা পালন করে এবং পরিবেশ রক্ষায় সাহায্য করে।। তবে ছাগলের খামারের অনেক যত্নের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা এখানে আধুনিক পদ্ধতিতে  ছাগল পালন পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ছাগলের বাসস্থান নির্বাচনঃ

 ছাগলের বাসস্থান নির্বাচন ছাগলের খামার পরিকল্পনার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সঠিক স্থান নির্বাচন খামারকে লাভজনক করে তুলতে সাহায্য করে। এর জন্য আপনাকে উপযুক্ত একটি স্থান নির্বাচন করতে হবে। ছাগল একটি গৃহপালিত পশু ।ছাগলের খামারের জন্য শুষ্ক এবং উঁচু  কোন জায়গা নির্বাচন করতে হবে।

 ছাগলের ঘর মাটি হতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ ফুট উঁচু করে নির্মাণ করতে হবে। এতে করে মাটির শ্বেত শ্বেতে  ভাবটা ছাগলের উপরে প্রভাব ফেলবে না এবং ছাগলের বিস্টা পরিষ্কারের জন্য একজন কর্মী খুব সহজে যাতায়াত করতে পারে।

 ছাগলের খামারের জন্য অনেক খরচের কোন উপাদান ব্যবহার করা লাগবে না। সাধারণত বাস দিয়ে ঘর তৈরি করলেই চলবে।চালে টিন  ব্যবহার করা যাবে।ছাগল গৃহপালিত পশু তাই ঘরের বাইরেও তাদের চলাফেরা করার জন্য একটা বড় জায়গা বা চারণভূমি  দরকার।সেই জায়গার উপরে ভিত্তি করে ছাগলের ঘর নির্মাণ করতে হবে । 

ছাগলের জাত নির্বাচনঃ

আধুনিক পদ্ধতিতে খামারে  ছাগল লালন পালন পরিকল্পনার  অন্যতম উপাদান ছাগলের জাত নির্বাচন।ছাগলের বিভিন্ন জাত রয়েছে। এর মধ্যে দেশী জাত অন্যতম। শুধুমাত্র যে দেশী জাতের ছাগল পালন করা হচ্ছে তা কিন্তু না। বর্তমানে বিদেশি জাতের অনেক ছাগল,খামারিরা পালন করে। বিদেশি ছাগল দুধ এবং মাংস উৎপাদনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাই বলে যে দেশী জাতের ছাগলের চাহিদা নেই এমনটি না।

দেশী জাতের ছাগলের অনেক চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশের বাজারে। দেশী জাতের ছাগলের দুধ এবং মাংসের চাহিদা অনেক বেশি। প্রথমে একজন খামারীকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সে কিসের জন্য ছাগলের খামার পরিকল্পনা করবে,মাংস উৎপাদন নাকি দুধ উৎপাদন। আমরা এখন ছাগলের বিভিন্ন জাত সম্পর্কে আলোচনা করব।

ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলঃ 

বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচিত ছাগল হচ্ছে কুষ্টিয়ার ব্ল্যক বেঙ্গল জাতের ছাগল। এই ছাগলকে কুষ্টিয়ার গ্রেট বলা হয়। এ জাতের ছাগল দেশের সর্বত্র পাওয়া যায় এবং এটাকে দেশী ছাগল বলেই আখ্যায়িত করা হয়। এ জাতের ছাগলের ওজন ২৫ থেকে ৩০ কেজি হয়ে থাকে। পুরুষ জাতের ছাগলের ওজন আরেকটু বেশি হয়। 

ব্ল্যক বেঙ্গল জাতের ছাগল দৈনিক ৩০০ থেকে ৩৫০ মিলিলিটার দুধ দিয়ে থাকে। এ জাতের ছাগলের গায়ের রং কালো। এটি দেশী ছাগল সুতরাং এর খাদ্য তালিকায় অনেক বেশি খাবারের প্রয়োজন হয় না। এরা সাধারণত ঘাস লতাপাতা খেয়ে জীবন ধারণ করতে পারে । এ জাতের ছাগল ছয় থেকে সাত মাস পর পর বাচ্চা দিয়ে থাকে এবং প্রতিবারই দুই থেকে তিনটি করে বাচ্চা দেয়।  

রাম ছাগল বা যমুনাপাড়ি ছাগলঃ

রামছাগল আমাদের দেশের অনেক পরিচিত একটি  ছাগল জাত।রাম ছাগল  দেশী জাতের ছাগলের থেকে বড় হয়।এ জাতের ছাগলকে যমুনাপাড়ি ছাগল নামেও অবহিত করা হয়। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় এ জাতের ছাগল বেশি দেখা যায়। রাম ছাগল বড় সাইজের ছাগল বলে মাংস উৎপাদনের জন্য এর চাহিদা অনেক।তবে এ জাতের ছাগলের মাংস দেশী জাতের  ছাগলের মাংসের মত এত সুস্বাদু না।

এ জাতের ছাগলের গায়ের রং সাদা বা তামাটে হয়ে থাকে। রামছাগল দৈনিক ১.৫  থেকে ২ লিটার পর্যন্ত  দুধ দিতে পারে। এদের দুধে ফ্যাটের পরিমাণ অনেক বেশি। রামছাগল চেনার সহজ পদ্ধতি এদের কান অনেক লম্বা হয়। এদের কানের দৈর্ঘ্য ৬ থেকে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে।গড় ওজন ৭৫ থেকে ৯০ কেজি হয়ে থাকে।

পুরুষ ছাগলের তুলনায় স্ত্রী ছাগলের ওজন প্রায় অর্ধেক। এজাতের ছাগল বছরে একবার বাচ্চা দেয়।  প্রতিবারই একটি কিংবা দুইটি বাচ্চা দিয়ে থাকে। এদের সাইজ অনেক বড় বিধায় বাজারে এদের চাহিদা অনেক বেশি। আধুনিক পদ্ধতিতে খামারে  ছাগল লালন পালন  পরিকল্পনায় এ জাতের ছাগল নিয়ে কাজ করতে পারেন। 

বিটল ছাগলঃ 

 বিটল জাতের ছাগল বাংলাদেশে না দেখা গেলেও এশিয়ার অন্যান্য দেশ যেমন ভারত ,পাকিস্তান, ভুটান এসব দেশে অতান্ত জনপ্রিয়। বিটল জাতের ছাগল মাঝারি আকারের একটি ছাগল। লম্বায় ৮০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। এ ছাগলের কান রাম ছাগলের মতোই লম্বা। ছাগল চেনার সহজ পদ্ধতি বাদামী রঙের উপর বিভিন্ন জাতীয় ফোটা ফোটা  রং।

বিটল ছাগল দৈনিক তিন থেকে চার লিটার পর্যন্ত দুধ দিতে পারে সুতরাং বুঝতেই পারছেন দুধ উৎপাদনের জন্য উত্তম জাত হচ্ছে বিটল জাতের ছাগল। এ জাতের ছাগল বছরে একবার বাচ্চা প্রসব করে। প্রতিবারই একটা বা দুইটা বাচ্চা দিয়ে থাকে। খামারে ছাগল লালন পালন পদ্ধতি বা পরিকল্পনা যদি দুধ উৎপাদনের জন্য হয় তাহলে বিটল উত্তম জাত হবে।

বোয়ার ছাগলঃ

আপনার উদ্দেশ্য যদি মাংস উৎপাদন হয় তাহলে এই জাতের ছাগল আপনার জন্য অনেক গুরুত্ব পূর্ণ। এই জাতের ছাগল মাংস উৎপাদনের জন্যই পালন করা হয়। বড় জাতের একটি পুরুষ ছাগলের ওজন ১০০ থেকে ১৫০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং স্ত্রী জাতির ছাগলের ওজন 90 থেকে 120 কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাহলে বুঝতেই পারছেন কি পরিমাণ মাংস দিতে সক্ষম এই জাতের ছাগল। বোয়ার  জাতের ছাগল অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডের মতো উন্নত রাষ্ট্রগুলো লালন পালন করে থাকে। 

বারবারি ছাগলঃ

আমরা এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ছাগলের জাত সম্পর্কে পরিচিত হয়েছি। ছাগলের জাত নির্ধারণ খামার পরিকল্পনার অন্যতম একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এ পর্যায়ে আমরা বারবারি  ছাগলের জাত সম্পর্কে জানব। এ জাতের ছাগল ২৫ থেকে ৩০ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। মাংস এবং দুধ উৎপাদনের জন্য এটি ভালো।

 বাংলাদেশের আবহাওয়ার জন্য এই ছাগল অত্যন্ত লাভজনক। আমাদের মাথায় রাখতে হবে উপযুক্ত জাত  নির্বাচনের সমস্যার কারণে খামারিদের বড় রকমের লসের সম্মুখীন হতে পারে। সুতরাং কোন উদ্দেশ্যে ছাগল পালন করতে চান সেইটা ঠিক করে সিদ্ধান্ত নিন। সবচেয়ে ভালো হয় একজন অভিজ্ঞ খামারির থেকে আপনি পরামর্শ নিন।

লেখকের মন্তব্যঃ

পোস্টটি পড়ে যদি আপনি আপনার কাঙ্খিত তথ্য পেয়ে থাকেন তাহলে আপনি আপনার মতামত শেয়ার করুন। যদি এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগে তাহলে শেয়ার করে আপনার পরিচিতজনদের জানার সুযোগ দিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url