আধুনিক পদ্ধতিতে গরুর খামার পরিকল্পনা
আপনি হয়তো আধুনিক পদ্ধিতিতে গরুর খামার পরিকল্পনা নিয়ে অনেক বেশি চিন্তিত।সঠিক সমাধান খুঁজে পাচ্ছেন না! আমরা আপনাকে আধুনিক পদ্ধতিতে গরুর খামার পরিকল্পনার সঠিক তথ্য দিব।আপনি যদি সঠিক তথ্য পেতে চান তাহলে নিচের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণভাবে পড়বেন।এখানে আমরা আপনাকে গরু মোটাতাজা করন,দানাদার খাবার ছাড়া গরু পালন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। আমি আশা করছি আপনি আপনার সমস্যা সমাধান করতে পারবেন এবং কাঙ্খিত তথ্য দিতে আমি সফল হবো।
এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করছি আধুনিক পদ্ধতিতে গরুর খামার পরিকল্পনার সকল বিষয়, যেমন গরুর ঘর বানানো গরুর জাত নির্ধারণ, কোন ঘাস গরুর জন্য উপকারী,দানাদার খাবার ছাড়া গরু পালন ইত্যাদি সকল বিষয়ে জানতে নিচের আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়ুন।
ভুমিকাঃ
আধুনিক পদ্ধতিতে গরুর খামার পরিকল্পনা একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া। গরুর জন্য সঠিক স্থান নির্বাচন, সঠিক ঘাস এবং সঠিক জাত নির্ধারণ করতে পারলে এই ব্যবসা অনেক লাভজনক করা সম্ভব।সঠিক খামার পরিকল্পনা আমাদের জীবনে অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। নিচে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
আধুনিক পদ্ধতিতে গরুর খামার তৈরির পরিকল্পনাঃ
গরুর খামারে সফল হয়েছে এমন খামারির সংখ্যা আমাদের দেশে অসংখ্য রয়েছে। আবার ভুল পরিকল্পনা বা পরিকল্পনা ছাড়া শুরু করার কারণে অনেক খামারীকে সর্বস্বান্ত হতেও দেখা গিয়েছে। তাই একটি সফল খামার তৈরি করতে সঠিক এবং উপযুক্ত পরিকল্পনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কি কি বিষয়ে পরিকল্পনা করা দরকার সে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা এখন বিস্তারিত আলোচনা করব।
গরুর খামারের জন্য স্থান নির্বাচন ঃ
গরুর খামার পরিকল্পনার সর্বপ্রথম স্তর হচ্ছে সঠিক স্থান নির্বাচন।সঠিক স্থান নির্বাচনের অভাবে খামার অলাভজনক হয়ে উঠে। গরু খামারের স্থানটা এমন একটা জায়গা হবে যেখানে গরুর বাজারের অবস্থান সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায় বা বাজারের সহজলভ্যতা থাকে। এটা অবশ্যই রাস্তার পাশে হতে হবে।যেন যাতায়াত ব্যবস্থাটা সুন্দর সহজ থাকে।এছাড়াও গরুর ঘাস উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট জমি রয়েছে এমন স্থান নির্বাচন করা।
মনে রাখতে হবে গরুর খামার এর অন্যতম একটা উপাদান হচ্ছে ঘাস।তাই আমরা এমনভাবে স্থান নির্বাচন করব যেন খামারের আশেপাশে গরুর একটা বাজার থাকে এবং সেখানে যাতায়াত ব্যবস্থাটা অনেক সহজ হয় সাথে ঘাস চাষের জন্য ব্যাপক জমির সহজলভ্যতা থাকে।
গরুর জন্য ঘর নির্মাণঃ
খামার পরিকল্পনার অন্যতম একটা উপাদান হচ্ছে গরুর জন্য ঘর নির্মাণ।শুরুতেই আমাদের গরুর জন্য একটি আরামদায়ক ঘর বানাতে হবে।
ঘর তৈরির নিয়মঃ প্রথমে আমাদের ঠিক করতে হবে যে আমরা কি ধরনের ঘর তৈরি করব।এক সারির ঘর তৈরি করব নাকি দুই সারির ঘর তৈরি করব। তবে দুই সারির ঘর তৈরি করা বেশি উত্তম।এই পদ্ধতিতে জায়গার পরিমান কম লাগে এবং ঘর পরিষ্কার করা সহজ হয়।
খামারের নকশাঃ একটি গরুর জন্য প্রস্থ মিনিমাম ৭ থেকে ৮ ফুট জায়গা রাখতে হবে। অর্থাৎ দুই পাশে গরুর জন্য যায়গা লাগবে ৮+৮=১৬ ফুট। গরুর খাবারের দেয়ার জন্য যে জায়গা তৈরি করা হবে সেটা হবে ২ ফুট।সুতরাং দুই পাশে খাবারের যায়গা লাগবে ২+২=৪ ফুট। সেই হিসাব করতে গেলে দুই পাশে মোট ২০ ফুট জায়গা দরকার। মাঝ বরাবর যাওয়া আসা করার জন্য এবং গরুকে খাবার দেওয়ার জন্য যে যায়গা ছাড়া হবে তার দৈর্ঘ্য হবে ৪ ফুট।তাহলে প্রস্থ ২৪ ফুট হতে হবে।
এখন আসাযাক ঘরের দৈর্ঘ্যের দিকে।একটি গরু থেকে আর একটি গরুর দূরত্ব হবে ৪ ফুট।দরজার জন্য যায়গা লাগবে ৪ ফুট।সুতরাং আমরা যদি ১০ টি গরু নিয়ে চিন্তা করি তাহলে ১০ টি গরুর জন্য দুই সারিতে লম্বা হবে ২৪ ফুট।এই পরিকল্পনাই গরু হেড টু হেড ভাবে দাঁড়াবে।অর্থাৎ ২ সারির গরু একদিকে মুখ করে খাবে।
এবার আসি ঘরের উচ্চতার দিকে। যারা ছোট আকারে খামার শুরু করতে চাই সেই সব খামারের জন্য ঘরের উচ্চতা ১৪-১৫ ফুট করলেই হবে।
এবার ঘরের চারপাশে ৪-৫ ফুট উঁচু করে ইট দিয়ে গেঁথে বাকি যায়গাটূকু তাঁরের বেড়া কিংবা লোহার গ্রিল দিয়ে চারপাশ ঘেরাও করতে হবে, যেন গরু পর্যাপ্ত পরিমান আলোবাতাস পাই।মনে রাখতে হবে যে গরু ঠাণ্ডাই মরে না কিন্ত গরমে মারা যায়।
সুতরাং ঘর যত খোলামেলা হবে তা গরুর জন্য অনেক ভালো।
ঘরের মেঝে ইট দিয়ে ঢালাই দিয়ে দিতে হবে। চালার জন্য সবচে উত্তম হয় সিমেন্টের টিন কিংবা উন্নত মানের প্লাস্টিকের টিন। তাতে ঘর ঠাণ্ডা থাকবে।
গরুর জাত নির্বাচন ঃ
আধুনিক পদ্ধতিতে গরুর খামার পরিকল্পনাকে লাভজনক করে তুলতে গরুর জাত নির্বাচনে খামারিকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। সঠিক গরুর জাত নির্বাচনের অভাবে আপনার লাভজনক প্রতিষ্ঠানটি অলাভজনকে পরিনত হয়।সুতরাং গরুর জাত নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
গরুর জাত নির্বাচনের পূর্বে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি মাংস নাকি দুধ উৎপাদনের জন্য খামার করছেন। আসুন এখন কয়েকটি মাংস উৎপাদনকারী গরুর সাথে পরিচিত হয়।
বিশ্বের মাংস উৎপাদনকারী গরুর জাত প্রায় 250 টি।এর মধ্যে প্রায় ৬০% যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মাংস রপ্তানি কারক দেশ।
ব্রাহ্মামাঃ এটি আমেরিকান একটি জাত। ১৮৮৫ সালের দিকে আমেরিকান বিজ্ঞানীরা ভারতীয় উপমাহাদেশর গরুর উপর গবেষনা করে এই সংকর জাতের গরুর উদ্ভাবন করে।এই গরু অতি গরম সহিষ্ণু । এই জাতের একটি গরুর ওজন আনুমানিক ১০০০-১২০০ কেজি হয়ে থাকে।
রেড সিন্ধি জাতের গরুঃ এই জাতের গরুর উৎপত্তি পাকিস্থানের করাচি ও হাইদ্রাবাদে। এ জাতের গরু বাংলাদশ,ভারত,পাকিস্থান,ইন্দোনেশিয়া,শ্রীলঙ্কা ,আমেরাকাতে পাওয়া যায়।
এই জাতের গরু সাধারনত বাদামী বা লাল হয়ে থাকে।প্রাপ্ত বয়স্ক গরুর ওজন ৩০০-৪০০ কেজি হয়ে থাকে।
হেয়ারফোর্ডঃ হেয়ারফোর্ড ইংল্যান্ডের একটি গরুর জাত। এদের মুখের রং সাদা হয় এবং নিতম্ব সহ উপরের অংশ বাদামী রঙ হয়ে থাকে। বিভিন্ন পরিবেশে সহজেই মানিয়ে নিতে পারে তাই এদের লালন পালন খরচ তুলনামূলক অনেক কম। এ জাতের পুরুষ গরুর ওজন ৮০০ থেকে ৮৫০ কেজি হয়ে থাকে। এবং মেয়ে জাতের গরুর ওজন ৫৫০ থেকে ৬০০ কেজি হয়।
শাহিওয়ালঃ পাকিস্তানের পাঞ্জাবের একটি জেলার নাম শাহিওয়াল। সেই জেলার সাথে মিল রেখে এই গরুর নামকরণ করা হয়েছে শাহীওয়াল জাতের গরু। এ জাতের গরু মাংস এবং দুধ উভয়ই উৎপাদনের জন্য লালন পালন করা হয়।বাংলাদেশে এ জাতের গরু অনেক চাহিদা রয়েছে।অনেক খামারি মাংস উৎপাদনের জন্য শাহিওয়াল জাতের গরু কে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।
শাহিওয়াল জাতের গরু লালচে বাদামী রঙের বা হালকা লাল হয়ে থাকে। একটি পুরুষ জাতের গরুর ওজন ৫০০ থেকে ৬০০ কেজি হয়ে থাকে এবং একটি মেয়ে গরুর ওজন বা গাভী গরুর ওজন ৪০০ থেকে ৪৫০ কেজি হয়ে থাকে। শাহীওয়াল জাতের গরুর প্রচন্ড গরম সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে। তাই উষ্ণ অঞ্চলে এই জাতের গরুর চাহিদা অনেক বেশি।
এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। শাহিওয়াল জাতের গরু মাথা চওড়া এবং শিং ছোট হয়। শাহীওয়াল জাতের গরুর গড় আয়ু ২৫ থেকে ৩০ বছর হয়ে থাকে এবং ২০ বছর পর্যন্ত এরা টানা উৎপাদন দিতে সক্ষম।শাহিওয়াল জাতের গরুর মাংসের খুব সুনাম রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাংসের জন্যই এটি পালন করা হয়ে থাকে।
রেড সিন্ধিঃ রেড সিন্ধি জাতের গরু পাকিস্তান,ভারত,বাংলাদেশ,শ্রীলংকা,মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াতে বেশি পাওয়া যায়। এ জাতের গরু মাংস এবং দুধ দুটোই উৎপাদনের জন্য খামারে লালন পালন করা হয়। এ জাতের গরুর ওজন ৩৫০ থেকে সাড়ে ৪৫০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। সদ্য জন্মানো একটি বাছুরের ওজন ২০ থেকে ২১ কেজি পর্যন্ত হয়।
এছাড়াও রয়েছে দেশি গুরু,সংকর জাতের গরু,জার্সি ,ফ্রিজিয়ান,নেপালি সহ অনেক জাত।
গরুর খাবারের জন্য ঘাস উৎপাদনঃ
খামারের খরচ বাঁচাতে ঘাসের বিকল্প নেই। তাই এই উপাদানটি ভালোভাবে মাথাই রাখতে হবে।
ঘাসের জমি নির্ধারণের সময় অবশ্যয় উচু জমি নির্ধারণ করতে হবে যাতে বৃষ্টির পানিতে ঘাস ডুবে না যায়। তারপর উন্নত যাদের ঘাস রোপন করতে হবে।
গরুর জন্য উন্নত জাতের ঘাসঃ
নেপিয়ার,প্যাএয়া, জার্মানি ,গিনি ইত্যাদি।
লেখকের মন্তব্যঃ
এই পোস্ট পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে এবং আপনি সঠিক তথ্য পেয়ে থাকেন তাহলে কমেন্টে আপনার মন্তব্য দিন। বিষটি ভালো লাগলে শেয়ার করে আপনার পরিচিত জনদের জানার সুযোগ দিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url